সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন সড়কে নিহত হচ্ছে ১৪ জনের বেশি মানুষ। ঈদ বা অন্য কোনো উৎসব কিংবা লম্বা কোনো ছুটির সময়ে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৬৭ জনের।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। তাঁদের মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ পরিবারের জন্য দুঃসহ ট্র্যাজেডি, রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হওয়া সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে বিআরটিএ, পুলিশ, সড়ক বিভাগ কারও কোনো গা নেই।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক, অবৈধ যান ও ক্লান্তি নিয়ে চালকদের গাড়ি চালানো। আপ্তবাক্যের মতো সবাই সেটা আওড়ালেও না সরকারি কর্তৃপক্ষ, না পুলিশ, না মালিকপক্ষ সেটা মানে। ফলে নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার দুষ্টচক্র থেকে সড়ক বেরিয়ে আসতে পারছে না।
এই সামষ্টিক উপেক্ষার নির্মম বলি হচ্ছে পথচারী, যাত্রী, চালক-সহকারী। অথচ জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছিল ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে কমিয়ে আনবে। সেই অঙ্গীকারের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা হলেও বাস্তবে আমরা উল্টো যাত্রাটাই দেখছি। সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর লেখ প্রতিবছরই ঊর্ধ্বমুখী।
অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের জাতীয় বাজেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। তাহলে কি আমাদের নীতিনির্ধারকেরা এটা ধরে নিয়েছেন যে সড়ক, সেতু তৈরি করলে আপনা–আপনি দুর্ঘটনা সব হাওয়া হয়ে যাবে? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান মনে করেন, বাংলাদেশই বোধ হয় পৃথিবীর একমাত্র দেশ, সড়কের ক্ষেত্রে যারা বিজ্ঞানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছে। সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রেখে, সেগুলো লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে চালিয়ে আমরা সড়ক প্রশস্ত করে ভাবছি দুর্ঘটনা আপনা থেকেই কমে যাবে। খবর জানাচ্ছে, গত ১৬ এপ্রিল বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর বেরিয়ে আসে অবৈধভাবে ট্রাকটিতে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল আর বাসটির কোনো ফিটনেস সনদ ছিল না। এর ঠিক ছয় দিন পর চট্টগ্রামের রাউজানে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। যে বাসটি শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দেয়, সেটি ছিল ফিটনেসবিহীন ও ৪৩ বছরের পুরোনো।
প্রশ্ন হলো, বিশ্বে কোনো দেশে সড়কে ৪৩ বছরের পুরোনো বাস চলাচল করে? এ ধরনের ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে চলতে দেওয়া আর নাগরিকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার শামিল।
সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব বিআরটিএর। তাদের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ১৭ হাজার যানবাহন ফিটনেস সনদ নেয়নি। পৃথিবীর কোনো দেশেই আমাদের মতো করে পাইকারি হারে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয় না। তারপরও অনেক গাড়ির মালিক ফিটনেস সনদ নিতে আগ্রহী নন। কারণ, তাঁরা জানেন যে সড়ক–মহাসড়কে নানাভাবে ম্যানেজ করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো যায়। সে কারণেই আমরা দেখছি যে গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু যথাক্রমে ৬০ দশমিক ২৮ শতাংশ ও ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
সড়ক–মহাসড়ককে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে সঁপে দিয়ে কোনোভাবেই দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের চাপে সড়ক পরিবহন আইনকে সংশোধন করে আইনটিকে যেভাবে নখদন্তহীন বাঘে রূপান্তরিত করা হয়েছে, সেটা বরং সড়কে নৈরাজ্য বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার বিকল্প কী আছে? সড়কে নাগরিকের হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).