যে যায় লঙ্কায়, সে-ই রাবণ হয় কি না, জানা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে যাঁরাই আসেন, তাঁরা প্রায় সবাই সাংবাদিক তথা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে ভয় পান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানার অধিকার আছে জনগণের, সে জন্যই সাংবাদিকেরা সেখানে যান সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকের ফরমানে বলা হয়, ‘সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংবাদিকেরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন।’
এর অর্থ এত দিন সাংবাদিকেরা যে নির্দিষ্ট খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে যেতে পারতেন, সেটা আর পারবেন না। এটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। কোনো সাংবাদিককে আগে থেকে বলে দেওয়া যায় না যে তিনি কার সঙ্গে দেখা করবেন, তথ্য সংগ্রহের জন্য কার কার কাছে যাবেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। কর্মসূচি চলাকালে অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদকদের ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি সুরাহা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু সেটি সফল হয়নি। গভর্নরের সাফ কথা, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের টপ সিক্রেট ডকুমেন্ট পাচার হয়ে যাচ্ছে, ফলে তাঁদের প্রবেশে বিধিনিষেধ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ তখনই আরোপ করল, যখন ব্যাংক একীভূতকরণ খেলাপি ঋণ ইত্যাদি নিয়ে ব্যাংকিং খাতের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কি তারা নিজেদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইছে?
তবে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কাজটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবারই প্রথম করেছে, তা নয়। ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন এবং নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেন ফজলে কবির। তাঁর যোগদানের দিনই গভর্নর ভবনের তৃতীয় তলায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের আপত্তি ও প্রতিবাদের মুখে পরে সেটা বাতিলও করা হয়েছিল।
২০২২ সালের জুলাই মাসে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পরও একই রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকেরা। এরপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংক ফের সাংবাদিকদের জন্য ‘দরজা বন্ধ নীতি’ ঘোষণা করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে না ব্যাংকিং খাতের দুষ্টচক্রকে রক্ষা করতে চাইছে, সেটাই প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
টপ সিক্রেট দলিল রক্ষার নামে সাংবাদিকদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাকে যেমন ক্ষুণ্ন করবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতে যেটুকু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আছে, তারও পরিসমাপ্তি ঘটবে। আমরা আশা করতে চাই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী এই বিধিনিষেধ বাংলাদেশ ব্যাংক অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে এবং সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে লিখিত বা অলিখিত বাধাদান থেকে বিরত থাকবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 200,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).