শিশুদের জন্য খেলার মাঠগুলো রক্ষা করতে হবে

স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটানো এবং নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্ক্রিন টাইম ও বসে থাকা কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও সক্রিয় খেলায় বেশি সময় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এক বছর বয়স পর্যন্ত স্ক্রিন টাইমের (টেলিভিশন বা ভিডিও দেখা, কম্পিউটারে গেম খেলা) কোনো প্রয়োজন নেই। 

দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুরা দিনে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা স্ক্রিনে সময় কাটাতে পারে, তবে কম হলে ভালো হয়। সব শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা, সঠিক মাত্রার ঘুম ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। 

কিন্তু বাংলাদেশে শিশুদের স্ক্রিনে সময় কাটানো এবং খেলাধুলার সুযোগের অভাব এক বিরাট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে খেলার ভূমিকা

খেলা শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন। খেলার সময় আবেগের কার্যকর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের সমন্বয় করার দক্ষতা, ভাষা এবং সামাজিক ও মানসিক স্থিতিশীলতার ৩৩-৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে খেলার মাধ্যমে (সূত্র: প্যারেন্টিং ফর ব্রেন)। খেলার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার পরিধি বেড়ে যায়। কোনো কিছু কল্পনা করে খেলা বা ‘প্রিটেন্ড প্লে’ সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়নি, এমন শিশুদের শব্দভান্ডার তৈরি এবং ভাষাগত দক্ষতার উন্নতি হয় এ ধরনের খেলার মাধ্যমে। জীবনের সমস্যাগুলো কল্পনা করে খেলা শিশুদের নিজেদের মতো করে বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে তাদের যে ধরনের সামাজিক ভূমিকা পালন করতে হবে, তা অনুশীলনের জন্য খেলা হলো একটি উপযোগী মাধ্যম।

একসঙ্গে খেলার মাধ্যমে শিশুরা পারস্পরিক সহযোগিতা, নিয়ম অনুসরণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। খেলাধুলা করলে শিশুরা সমবয়সীদের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে পারে এবং বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়। তাদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে এবং তারা জয়-পরাজয় মেনে নিতে শেখে।

খেলার মাঠের অভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে

বাংলাদেশে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ শহরের সবুজ এলাকা, পার্ক ও খেলার মাঠের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০১৮ সালে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সালমা আখতার পরিচালিত এক গবেষণায় (চিলড্রেন’স প্লে রাইট সিচুয়েশন ইন ঢাকা সিটি) জানা যায়, শিশুদের খেলার ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো হলো—পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ, খেলার মাঠের অপ্রতুলতা এবং বাইরে খেলার সময় নিরাপত্তার অভাব। উন্মুক্ত স্থানগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নিচ্ছে এবং সেখানে শিশুরা আর প্রবেশ করতে পারছে না। পাশাপাশি মেলা, হাট এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য খেলার মাঠ ইজারা দেওয়া হয়। পার্কে অফিস বা কমিউনিটি সেন্টার ও নির্মাণ করা হচ্ছে।

খেলার ক্ষেত্রে ১১ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়। এর চেয়ে ছোট যারা, তাদের জন্য খেলার জায়গার অভাব বড় সমস্যা। বড় হওয়ার পর মেয়েরা খেলা থেকে বিরত থাকে বা আলাদা সুযোগ-সুবিধা চায়। কারণ, তারা বড় ছেলেদের সঙ্গে খেলতে অস্বস্তিবোধ করে, হয়রানির শিকার হয় এবং ছেলেদের সঙ্গে খেললে বিরূপ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মুখোমুখি হয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের খেলার সুযোগ নেই বললেই চলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও কল্যাণপুরের বস্তিতে শিশুদের মধ্যে চালানো জরিপ থেকে জানা যায়, কল্যাণপুর এলাকায় প্রায় অর্ধেক শিশু ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে খেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে এ খেলার হার ৯ শতাংশ আর ধানমন্ডিতে ১২ শতাংশ।

সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল খেলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাঠ আছে এবং ধানমন্ডির শিশুরা ভাড়া করা জায়গায় খেলতে পারে। অন্যদিকে কল্যাণপুর বস্তির শিশুদের এলাকার ভেতরে বা বাইরে কোনো মাঠ নেই। বোঝা যাচ্ছে, মাঠে খেলতে না পারলে শিশুদের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ে।

একবার লন্ডনের মেকলেনবার্গ স্কয়ারের একটা ছাত্রাবাসে বছরখানেক ছিলাম। কাছেই ছিল খেলার মাঠ—কোরামস ফিল্ড। প্রবেশের পথে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, সঙ্গে শিশু না থাকলে বয়স্ক কেউ মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না। খুব ভালো লেগেছিল শিশুদের জন্য মাঠটাকে রক্ষা করার এ প্রচেষ্টা। ভাবছিলাম, বাংলাদেশের শিশুরা কতটা বঞ্চিত।

শিশুদের খেলার অধিকার রক্ষা করতে হবে

‘পাড়ার ছোট্ট পার্ক/ঘাস নেই আছে ধুলো/ঘাসের অভাব পরোয়া করে না সবুজ বাচ্চাগুলো’—কবীর সুমনের গানে যে পার্কগুলোর কথা আছে, তা রক্ষা করতে হবে। শিশুদের খেলার অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

মা-বাবা, শিক্ষক, নগর-পরিকল্পনায় নিয়োজিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শিশুদের জীবনে খেলার গুরুত্ব বুঝতে হবে। অনেক মা-বাবা ও অভিভাবক মনে করেন, শিশুদের দামি খেলনা কিনে দিতে হবে। আসলে শিশুরা বিনা উপকরণে বা খুব স্বল্প উপকরণ দিয়ে খেলতে পারে। যেমন দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ইচিং-বিচিং ইত্যাদির জন্য কোনো কিছু কেনার প্রয়োজন নেই। খেলার জন্য শিশুদের উৎসাহিত করা এবং জায়গা থাকাই যথেষ্ট। মেয়েরা যাতে খেলতে পারে, সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের ঘরে আটকে না রেখে তাদেরও খেলায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ব্যবহারের জন্য দখল হয়ে যাওয়া মাঠগুলো খেলার জন্য শিশুদের ফিরিয়ে দিতে হবে। জনসংখ্যা বাড়ছে, ফলে নতুন খেলার মাঠের জন্য জায়গা পাওয়া সহজ নয়। এ জন্য একটু ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাঠ ছুটির পর ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন সেখানে স্থানীয় শিশুরা খেলতে পারে। কোনো কোনো এলাকার রাস্তা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ রেখে সেখানে শিশুদের খেলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। বহুতল আবাসিক ভবনগুলোর নির্দিষ্ট একটি তলা শিশুদের খেলার জন্য বরাদ্দ রাখা যায়। তাহলে সেখানে বসবাসকারী সব শিশু খেলতে পারবে।

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

View All resone For signin

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

Recent News

This petiton does not yet have any updates

Jarin Anjum

Started This Abedon.

27 January 2024   4.2 K

0 have signed. Let’s get to 100,000 !

0%
Treands

At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!

Sign This

By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.

Must see setitions

সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন

সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন

যে যায় লঙ্কায়, সে-ই রাবণ হয় কি না, জানা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে যাঁরাই আসেন, তাঁরা প্রায় সবাই... Sign This
মেট্রোরেলেও কেন ভ্যাট বসাতে হবে?

মেট্রোরেলেও কেন ভ্যাট বসাতে হবে?

মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির দাম বাড়ানোর... Sign This
‘একটুর জন্য’ আটকে যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকারি সেবা

‘একটুর জন্য’ আটকে যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সরকারি সেবা

দৌড়াতে দৌড়াতে হয়তো স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হলেন, আশপাশের লোকজন সান্ত্বনা দিয়ে বলবে, এই ‘একটুর জন্য’ ট্রেনটা মিস করে ফেললেন, আর... Sign This
উন্নত সড়কে কেন লক্কড়ঝক্কড় বাস ???

উন্নত সড়কে কেন লক্কড়ঝক্কড় বাস ???

প্রতিবছর ঈদ এলেই ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য শহর ও শহরের আশপাশের... Sign This
শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের  বীরনিবাস বুঝিয়ে দিতে দেরি কেন

শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরনিবাস বুঝিয়ে দিতে দেরি কেন

বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই অসচ্ছল এবং পরিবার নিয়ে অভাব-অনটনে থাকেন। তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে... Sign This
পণ্যের দাম বেঁধে ভোক্তাসাধারণকে স্বস্তি দিন

পণ্যের দাম বেঁধে ভোক্তাসাধারণকে স্বস্তি দিন

সরকারের ‘যৌক্তিক’ মূল্যকে অযৌক্তিক ও কল্পনাপ্রসূত বলে আখ্যায়িত করেছে দোকান মালিক সমিতি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম কিংবা সরকারের কোনো প্রতিনিধির... Sign This
নবীনগর-আশুগঞ্জ মহাসড়ক,এক প্রকল্পে এত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কেন ?

নবীনগর-আশুগঞ্জ মহাসড়ক,এক প্রকল্পে এত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কেন...

সড়ক-মহাসড়ক কিংবা সেতু নির্মাণের প্রকল্প নিয়ে এমন অভিযোগ কেন আমাদের বারবার দেখতে হয়? প্রকল্প শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষ হতে বছরের... Sign This
ঢাকায় মশার উপদ্রব, সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিন

ঢাকায় মশার উপদ্রব, সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিন

দেড় শ বছর আগে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কলকাতার মশার উপদ্রব নিয়ে লিখেছিলেন, ‘রাতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতা আছি।’... Sign This
প্রকল্পে গাফিলতি, মেহেরপুরের সড়কটিতে আর কত দুর্ভোগ ???

প্রকল্পে গাফিলতি, মেহেরপুরের সড়কটিতে আর কত দুর্ভোগ ???

দেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে যে সমালোচনাটি সবার আগে চলে আসে, তা হলো যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া। মেহেরপুরের একটি আঞ্চলিক... Sign This
আবর্জনায় সয়লাব সুরমা, দূষণ রোধে জনসচেতনতা বাড়ানো হোক

আবর্জনায় সয়লাব সুরমা, দূষণ রোধে জনসচেতনতা বাড়ানো হোক

সুরমা—সিলেটের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে উচ্চারিত নদীর নাম। এ আন্তসীমান্ত নদী সুনামগঞ্জ ও সিলেট দুই জেলা দিয়ে প্রবাহিত। দেশের নদীদূষণ ও দখল... Sign This
Loading