কারখানার মালিকেরা শ্রমিক–স্বার্থবিরোধী নীতিমালা করেন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু সরকার কেন এমন নীতিমালা করবে, যাতে শ্রমিকেরা ন্যায্য পাওনা কিংবা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন?
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, করোনার কারণে পোশাক, চামড়া ও পাদুকাশিল্পের কাজ হারানো শ্রমিকদের সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জার্মানি সরকার যৌথভাবে ১১ কোটি ৩০ লাখ ইউরো অনুদান দিয়েছিল, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার মতো। এর সঙ্গে আরও ৩৬৫ কোটি টাকা যোগ করে সরকার। দুই উৎস মিলিয়ে তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হলেও গত তিন বছরে মাত্র ৯ কোটি টাকা পেয়েছেন শ্রমিকেরা।
১০ লাখ শ্রমিককে সহায়তা দেওয়ার চিন্তা থেকে সরকার ২০২০ সালের অক্টোবরে ‘রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন’ শীর্ষক একটি নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, তহবিল থেকে করোনায় কাজ হারানো শ্রমিকদের তিন মাস তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তৈরি করে দেওয়া এই নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা শ্রম অধিদপ্তরের ওপর।
কারখানাগুলোই উপকারভোগী শ্রমিকদের নির্বাচন করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ ছিল। বলা হয়, তারা নির্বাচিত দুস্থ শ্রমিকের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ব্যাংক বা এমএফএসের হিসাব নম্বর, মুঠোফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য সমিতির কাছে পাঠাবে। সমিতি তা পাঠাবে শ্রম অধিদপ্তরে। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি তা চূড়ান্ত করবে। টাকা সরাসরি দেওয়া হবে শ্রমিকদের ব্যাংক বা এমএফএস হিসাবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের আরেকটি কমিটি এ কার্যক্রম নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে।
নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ পাওয়ার কথা শ্রমিক, শারীরিকভাবে অক্ষম, প্রসূতিকল্যাণ-সুবিধাবঞ্চিত সন্তান জন্মদানকারী, করোনা বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত, শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্তের আওতার বাইরে থাকা শ্রমিক, ছাঁটাই হওয়া ও কর্মহীন, লে-অফ হওয়া কারখানার কর্মহীন শ্রমিক এবং চাকরি হারানো শ্রমিকদের।
শ্রমিকদের জন্য আসা অর্থ কেন তাঁরা পেলেন না? এই প্রশ্নের উত্তর যাঁদের দেওয়ার কথা, তাঁরা দায়িত্ব এড়াচ্ছেন। প্রথমেই শ্রম অধিদপ্তর যে ভুলটি করল, তা হলো মালিকদের তালিকা তৈরি করতে দেওয়া। কোনো মালিকই তাঁর কারখানায় মজুরি না পাওয়া কিংবা চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের তালিকা দেবেন না। এ ধরনের তালিকা দিলে ভবিষ্যতে তাঁদের বিপদ হতে পারে। মালিকদের সমিতিগুলো কিছু তালিকা দিয়েছে। সমস্যা হলো অনেক কারখানা আছে, যারা সমিতির সদস্য নয়। সে ক্ষেত্রে ওই সব কারখানার শ্রমিকেরা বঞ্চিত হবেন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার যথার্থই বলেছেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি বাস্তবায়নের মুখ দেখত, শ্রমিকেরাও টাকাটা পেতেন। সমিতির ওপর নির্ভর করায় উদ্যোগটি মার খেয়েছে। আমরাও মনে করি, তালিকা তৈরির দায়িত্ব শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছে দেওয়া হলে শ্রমিকেরা সহজেই সহায়তার অর্থ পেয়ে যেতেন।
শ্রমিকদের জন্য আসা বিদেশি সহায়তা অলস রেখে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। আশা করি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দুস্থ ও চাকরি হারানো শ্রমিকদের কাছে উল্লিখিত অর্থ বিতরণে দ্রুত বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 200,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).