যে প্রতিষ্ঠান মানুষের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখা ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে প্রতিকারে নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, সেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চার মাস ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা উদ্বেগজনকই বটে। এমন এক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী–শিশু ধর্ষণ, মব সহিংসতাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
খবর থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগের কমিশন টিকে ছিল ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। ওই দিন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদ, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা এবং অন্য চার সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক তানিয়া হক, আমিনুল ইসলাম ও কংজুরী চৌধুরী পদত্যাগ করেন। আরেক সদস্য কাওসার আহমেদ এর আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। এর ফলে সেখানকার কর্মীদের অভিযোগ গ্রহণের বাইরে কিছু করণীয় নেই; যদিও প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে অনেকেই কমিশনে আসেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন শুধু অভিযোগগুলো নিয়ে রাখছি। আর কিছুই করার নেই। আসলে কমিশন না থাকলে কোনো কাজ হবে না, সম্ভবও নয়।’
দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (সাহা) বাংলাদেশ ব্যুরো সদস্য সাঈদ আহমেদ বলেন, চার মাস চলে গেলেও নতুন কমিশন গঠিত না হওয়া হতাশাজনক। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘এখানে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব আছে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে ভালোমতো একটা নিয়োগ দিতে চাইছি। আশা করি, মাসখানেকের মধ্যে হয়ে যাবে।’
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার কোনোভাবে মানবাধিকার সুরক্ষায় তাদের দায়িত্বের বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত দেড় দশকের বেশি সময়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সক্রিয় থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এর বড় কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এর চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে নিয়োগ। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অন্তর্বর্তী সরকার এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে নিয়োগ দেবে, যাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠিত হবেন না।
২০০৯ সালে যে আইন দ্বারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পরিচালিত, তার বেশ কিছু ঘাটতি বা সীমাবদ্ধতা আছে। সাধারণ নাগরিক দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সেটা কমিশন তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু একই ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হলে কমিশন তা তদন্ত করতে পারে না। এটা কেবল বৈষম্যমূলক নয়, যে উদ্দেশ্যে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষেত্রেও বড় বাধা।
অন্তর্বর্তী সরকারে বেশ কয়েকজন সদস্য আছেন, যাঁদের দীর্ঘদিন মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। সেই সময় তাঁরা মানবাধিকার কমিশনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। এখন তাঁদের ওপরই মানবাধিকার কমিশনটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব অর্পিত। অতএব যোগ্য পদে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি আইনি ঘাটতিগুলো দূর করতে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন আশা করি।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 75,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).