দৌড়াতে দৌড়াতে হয়তো স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হলেন, আশপাশের লোকজন সান্ত্বনা দিয়ে বলবে, এই ‘একটুর জন্য’ ট্রেনটা মিস করে ফেললেন, আর এক মিনিট আগে এলেই হতো। সাকিবের বল স্টাম্প ঘেঁষে চলে গেলে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম দুই হাত মাথায় দিয়ে ‘ইশ্’ করে বুঝিয়ে দেন, এই ‘একটুর জন্য’ বুঝি উইকেটটা ফেলা হলো না। এমনকি তিন কেজি ওজনের কাতল মাছটি জালের ওপর দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে গেলে, হাঁটুজলে থাকা জেলেও বলে ওঠেন, আহা, এই ‘একটুর জন্য’ মাছটা জাল থেকে বেরিয়ে গেল।
একই প্রক্রিয়ায় আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাগুলোও শুধু এই ‘একটুর জন্য’ ঠিক ডিজিটাল হয়ে উঠতে পারছে না। এটা ঠিক যে তথ্যপ্রযুক্তিকে ভিত্তি করে আমাদের বেশ কিছু সেবা ডিজিটাল হয়েছে, আর্থিক খাতে হওয়া উদ্ভাবনী সেবার সুফলভোগী হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
আজ থেকে এক যুগ আগেও আমরা চিন্তা করতে পারিনি, এই দেশের রাস্তায় উবার-পাঠাওর মতো সেবা থাকবে, অ্যাপে বিরিয়ানি অর্ডার করলে বাসায় পৌঁছে যাবে। তা ছিল আমাদের স্বপ্নেরও অতীত। অনলাইনে সংযুক্ত থাকা চিকিৎসক রিপোর্ট যাচাই করে রোগীর সঙ্গে কথা বলে প্রেসক্রিপশন দেবেন, সেসব আমাদের ভাবনায়ও ছিল না।
তবে একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এসব সেবার বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের। এ কথা অনস্বীকার্য, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকদের জন্য সরকারি সেবা প্রদান আরও স্বচ্ছ ও আরও গতিশীল করা সম্ভব। পদে পদে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, দ্বারে দ্বারে যে ঘুরতে হয়, সেটিও দূর করা সম্ভব। কিন্তু এটি তখনই সর্বময়ভাবে ফলপ্রসূ হবে, যখন নাগরিকদের সশরীর সরকারি দপ্তরে যেতে হবে না।
অন্যভাবে বলতে গেলে, কোনো ব্যক্তির মুখোমুখি হতে হবে না। সেবা প্রদানের ১০টি ধাপের মধ্যে একটি ধাপও যদি ম্যানুয়েল বা ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকে, পুরো সেবা প্রদান প্রক্রিয়ার কার্যকরিতা সেই এক ধাপেই বাধাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
দুয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদনের সেবা চালু আছে, কিন্তু সেটি জমা দেওয়ার পর কত দিনে সংশোধিত পরিচয়পত্র পাওয়া যাবে। ধরা যাক, তা নির্ভর করবে উপজেলাপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার সে আবেদন যাচাই করে অনুমোদন দেওয়ার ওপর।
সবকিছু ডিজিটাল হওয়ার পরও শুধু এই ‘একটুর জন্য’ আটকে যেতে পারে সেবার মান। এই জায়গাতে সুযোগ থাকতে পারে হয়রানির বা কালক্ষেপণের। এখানে দুর্বলতা বা দায়ভার কিন্তু ডিজিটাল–প্রক্রিয়ার নয়, দায়ভার ব্যক্তির। কিন্তু অসন্তুষ্ট গ্রাহকের ক্ষোভ ঠিকই গিয়ে পড়ে ডিজিটাল–প্রযুক্তির ওপর। দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বছর বছর লাইসেন্স বা অনুমোদন নবায়নের প্রয়োজন পড়ে। এ–জাতীয় বেশ কিছু সেবা অনলাইনের দেওয়া হয় বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সব তথ্য অনলাইনে দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করার পর শেষে এসে যদি বলা থাকে, আবেদনের কপি বা ফি প্রদানের রসিদ প্রিন্ট করে সশরীর দপ্তরে হাজির হতে হবে, তাহলে অনলাইন আবেদন আর ততটা অর্থবহ থাকে না।
কোথাও কোথাও আবার আবেদন জমা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনেই হয়ে যাবে, শুধু অনুমোদন হওয়া কার্ড বা কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য কাউকে না কাউকে ‘একটুর জন্য’ হলেও যেতে হবে সরকারি অফিসে। আবারও সেই হয়রানির সুযোগ। কেমন জানি ডিজিটাল হলো হলো করেও একটুর জন্য আর হয়ে ওঠে না।
এটা ঠিক যে কিছু কিছু সংবেদনশীল সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সশরীর উপস্থিত হতে হয়। বায়োমেট্রিক ডেটা প্রদান কিংবা নিরাপত্তা বিবেচনায় সেসব সেবার ক্ষেত্রে দপ্তরে না যাওয়াটাই বরং অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু অন্য আর সেবাগুলোর ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব; অনলাইনে মূল্য পরিশোধ থেকে শুরু করে ডাকযোগে কাগজপত্র আদান-প্রদানের সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। অন্যথা সেই সেবাকে ডিজিটাল দাবি না করাই উত্তম।
আমেরিকান, জাপানিজ ও বাংলাদেশি তিন বন্ধু গল্প করতে বসেছে। আমেরিকান বন্ধু বলল, ‘আমার দেশ এমন এক রকেট বানিয়েছে, যেটি একেবারে আকাশের সঙ্গে ঘেঁষে ঘেঁষে ওড়ে।’ জাপানিজ ও বাংলাদেশি বন্ধু অবাক হয় চোখ কপালে তুলে বলল, ‘আকাশের সঙ্গে ঘেঁষে ঘেঁষে ওড়ে?’ আমেরিকান বন্ধু তৃপ্তির হাসি মুখে নিয়ে জবাব দিল, ‘একেবারে ঠিক আকাশ ঘেঁষে নয়, তার একটু নিচ দিয়ে ওড়ে।’
এরপর জাপানিজ বন্ধুর পালা। সে বলল, ‘আমার দেশ এমন এক সাবমেরিন বানিয়েছে, যেটি একেবার মহাসমুদ্রের তলদেশ ঘেঁষে ঘেঁষে চলে।’ আমেরিকান ও বাংলাদেশি বন্ধু অবাক হয় চোখ কপালে তুলে বলল, ‘তলদেশ ঘেঁষে ঘেঁষে চলে?’ জাপানিজ বন্ধু পরিতৃপ্তির হাসি মুখে নিয়ে বলল, ‘একেবারে ঠিক তলদেশ ঘেঁষে ঘেঁষে নয়, তার একটু ওপর দিয়ে চলে।’
তাদের দুজনের কথা শুনে বাংলাদেশি বন্ধু বলল, ‘আমাদের দেশের লোকজন নাক দিয়ে ভাত খায়।’ আমেরিকান ও জাপানিজ বন্ধু তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘বলো কী? নাক দিয়ে ভাত খায়?’ বাংলাদেশি বন্ধু মুচকি হেসে জানাল, ‘একেবারে ঠিক নাক দিয়ে নয়, তার একটু নিচ দিয়ে খায়।’ আমরা আর নাক দিয়ে ভাত খাওয়ার গল্প করতে চাই না। ‘একটুর জন্য’ আটকে থাকা ডিজিটাল বাংলদেশও চাই না। বরং আরেকটু পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা বাড়ালেই যে অর্থপূর্ণ ডিজিটাল সেবা পাওয়া সম্ভব, আমরা সেটি চাই, সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 500,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).