সরকার একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যদিকে তাঁরা যাতে ঘরে না থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কিন্তু তাঁরা নিজেদের বাড়িতেও থাকতে পারছেন না গ্রেপ্তারের ভয়ে। অনেক সময় উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে না পেয়ে পুলিশ অন্যদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতগুলো মৃত্যুর পরও যে সরকার বলপ্রয়োগের নীতি থেকে সরেনি, তার প্রমাণ গতকালের বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানির ঘটনা।
মন্ত্রীরা বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আন্দোলন করার কারণে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। অথচ আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, একেকটি এলাকায় ব্লক রেইড করে পুলিশ যাঁকে পাচ্ছে, তাঁকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তাদের এই অভিযান থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও রেহাই পাননি। পরে অবশ্য বেশ কিছু পরীক্ষার্থীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে দেশে যে শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে, সেটা তখনই সফল হবে, যখন শিক্ষার্থী ও জনগণ দেখবে যে সরকার বলপ্রয়োগের পথ থেকে সরে এসেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা বন্ধ হয়েছে। কেবল আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী নন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও আতঙ্কে আছেন।
সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য-বিবৃতির সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুবই কম। তাঁরা বলছেন, সন্ত্রাসীদের আক্রমণে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু হাসপাতালে লাশের যে সুরতহাল বর্ণনা পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, নিহত ৭৮ শতাংশের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির চিহ্ন। এসব গুলি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কাছেই থাকে।
হত্যা ও নাশকতার ঘটনা তদন্তে সরকার তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন করেছে। ইতিমধ্যে ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। যদি হত্যার আলামতই নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাঁরা কিসের ভিত্তিতে তদন্ত করবেন? রংপুরে আবু সাঈদের হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিশনের আজ রংপুরে যাওয়ার কথা। দুঃখজনক হচ্ছে, আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, তা সবার কাছে প্রতীয়মান হলেও এর আসামি করা হয়েছে একজন কিশোরকে।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি অফিসে এক সপ্তাহ আটক রাখা হয়েছে, জোর করে তঁাদের বিবৃতি পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে সরকার তাঁদের ছেড়ে দিলেও তাঁদের অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে আছেন। এ অবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থা আশা করা যায় না।
শুক্রবার শিক্ষার্থীদের আহ্বানে প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিলের কর্মসূচি পালিত হয় সারা দেশে। সর্বস্তরের মানুষ সক্রিয়ভাবে এই কর্মসূচি পালন করেন। লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আয়োজনও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হলেও বেশ কিছু স্থানে পুলিশ ও তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা মাঠে নামেন। খুলনা, হবিগঞ্জ ও রাজধানীর উত্তরায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। সরকার বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে সরকারি দলের যাঁরা অস্ত্র হাতে মাঠে নেমেছেন, তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার মুখে যা–ই বলুক, কাজে করছে উল্টোটা। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইলে প্রথম কাজটি হচ্ছে বলপ্রয়োগের পথ থেকে সরে আসা।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).