ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর থেকে সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের আটক করারও অভিযোগ উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এভাবে নির্বিচারে গ্রেপ্তার আইনের শাসন ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী কিনা- এমন প্রশ্ন উঠেছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেদিনের ঘটনায় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিন ডজনের বেশি মামলা দায়ের করে। দলটির মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিরোধী দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির ৯ হাজার ৪৬৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন মামলা করা হয়েছে ১৮৬টি। (ডেইলি স্টার, ৯ নভেম্বর ২০২৩)
বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (প্রথম আলো, ৫ নভেম্বর ২০২৩)। জাতিসংঘও একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘গণগ্রেপ্তার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে (প্রথম আলো, ৮ নভেম্বর ২০২৩)। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্থানে বিএনপি নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের আটক করার অভিযোগ উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে।
কিশোরগঞ্জে একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও তাঁর বড় ছেলে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আনান ইসলামকে ধরতে গিয়ে বাসায় পায়নি পুলিশ। পরে আমিনুলের ছোট দুই যমজ ছেলে শহীদুল ইসলাম ও মাকসুদুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। (বাবা-ভাইকে না পেয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় পরিবারে দুশ্চিন্তা, প্রথম আলো ৫ নভেম্বর ২০২৩)
ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় গত ২ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নারায়ণগঞ্জ শাখার সদস্যসচিব সালাউদ্দিন সালোকে গ্রেপ্তারে করতে কাঁচপুর ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায় তাঁর বাসায় গিয়েছিল পুলিশ। সালাউদ্দিন বাসায় না পেয়ে পুলিশ তার শ্বশুরবাড়ি বেহাকৈর গ্রামে যায়। সেখান থেকে তাঁর শ্বশুর ইসহাক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৫ নভেম্বর কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে ইসহাক ভূঁইয়ার দুই ছেলেকেও গ্রেপ্তার করা হয়। (ডেইলি স্টার, ৮ নভেম্বর ২০২৩)
নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজনদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'পুলিশ দিনে-রাতে যে কোনো সময় নেতা-কর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটককৃত নেতা-কর্মী কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের থানায় নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে।' (ডেইলি স্টার, ৬ নভেম্বর ২০২৩)
বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আইনে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের কোনো অভিযোগ বা মামলা থাকলে সেই ব্যক্তির পরিবর্তে তার স্বজনদের আটক বা গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই। এরপরও এ রকম ঘটনা ঘটছে কীভাবে? এ ক্ষেত্রে একটি ‘কৌশল’ কাজে লাগানো হয়েছে। উল্লেখিত ঘটনাগুলোতে গ্রেপ্তারকৃত কারও নাম মামলার এজাহারে ছিল না। কিন্তু আটকের পর তাদেরকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, গত কয়েক বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ, ভাঙচুর বা নাশকতার যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। সেটি হচ্ছে, এজাহারে নাম উল্লেখের পাশাপাশি বহু সংখ্যক ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা। এর ফলে যে কাউকে আটক করে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো খুব সহজ হয়ে গেছে।
বিএনপি নেতাদের না পেয়ে তাদের স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের এভাবে গ্রেপ্তার করাকে ‘মধ্যযুগীয় শাসন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম আইনের শাসন ও সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার থাকলে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে না। কিন্তু যেহেতু এ রকম হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে দেশে আইনের শাসন নেই এবং সাংবিধানিক অধিকারগুলোও রক্ষিত হচ্ছে না।’
আটকের পাশাপাশি রিমান্ড নিয়েও প্রশ্ন
২৯ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি বাড়িতে না থাকায় পুলিশ তার ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজীবকে আটক করে। গ্রেপ্তারের পর ইশরাকের মা ইশমত আরা বলেন, তাঁর ছোট ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় এবং তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। পল্টন থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিন রাতেই তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইশফাক ছাড়াও গত কয়েক দিনে বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আদালতের রিমান্ড মঞ্জুর করা নিয়ে শাহদীন মালিক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুর করা হচ্ছে। এতে মনে হয় সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগ আগে যতটুকু সচেষ্ট ছিল, এখন ততটুকু আর নেই। এটা হতাশাজনক।’
‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এরপর নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাদের স্বজনদের গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো দেশে আইনের শাসন না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। এর পাশাপাশি ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইন-আদালত নিয়ে এসব সমালোচনা ও প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 500,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).